আপনার ডিজিটাল জগৎ,
আপনার সুরক্ষা

এই নির্দেশিকাটি ডিজিটাল বিশ্বে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, গোপনীয়তা এবং পরিচয় সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রণীত হয়েছে।

অধ্যায় ১: আলোচিত সাইবার ঘটনা এবং আপনার ব্যক্তিগত ঝুঁকি

রিজার্ভ চুরি (২০১৬)

এই ঘটনা দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর আস্থা কমিয়ে দেয়, যা পরোক্ষভাবে আপনার আর্থিক লেনদেনের সুরক্ষাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।

আপনার জন্য ঝুঁকি: প্রাতিষ্ঠানিক আস্থার সংকট।

NID ডেটা ফাঁস (২০২৩)

আপনার নাম, ঠিকানা ও NID নম্বর ব্যবহার করে অপরাধীরা আপনার নামে ব্যাংক ঋণ, সিম রেজিস্ট্রেশন বা অন্যান্য অপরাধমূলক কার্যক্রম চালাতে পারে।

আপনার জন্য ঝুঁকি: পরিচয় চুরি ও আর্থিক প্রতারণা।

ডিপফেক প্রযুক্তির অপব্যবহার

আপনার ছবি বা ভিডিও ব্যবহার করে নকল কনটেন্ট তৈরি করে আপনাকে ব্ল্যাকমেল করা বা আপনার সামাজিক সম্মানহানি ঘটানো সম্ভব।

আপনার জন্য ঝুঁকি: ব্যক্তিগত সম্মানহানি ও মানসিক নির্যাতন।

অধ্যায় ২: অপরাধীর মনস্তত্ত্ব - যেভাবে আপনার বিশ্বাসকে অস্ত্র বানানো হয়

সাইবার অপরাধীরা উন্নত প্রযুক্তির চেয়েও বেশি ব্যবহার করে মানব মনস্তত্ত্ব। তারা আপনার লোভ (পুরস্কার জেতা), ভয় (অ্যাকাউন্ট হারানোর শঙ্কা), বিশ্বাস (প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়ের ছদ্মবেশ) এবং সহানুভূতি (জরুরি সাহায্যের ভান) - এই আবেগগুলোকে কাজে লাগিয়েই আপনাকে ফাঁদে ফেলে।

অধ্যায় ৩: আপনার ডিজিটাল পরিচয় ও তার সুরক্ষা

আপনার ডিজিটাল ছায়া: আপনি যা শেয়ার করেন

আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় যা কিছু পোস্ট বা শেয়ার করেন, তা আপনার একটি ডিজিটাল ছায়া (Digital Footprint) তৈরি করে। অপরাধীরা এই ছায়া বিশ্লেষণ করে আপনার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। আপনার ফেসবুকের ফ্রেন্ডস লিস্ট, ছবির ট্যাগ, বা চেক-ইন—সবকিছুই তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

করণীয়: আপনার সকল সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের প্রাইভেসি সেটিংস পর্যালোচনা করুন এবং শুধুমাত্র পরিচিতদের মাঝেই তথ্য সীমাবদ্ধ রাখুন।

অ্যাপের অনুমতি: সুবিধার আড়ালে ঝুঁকি

আপনি যখন কোনো অ্যাপ ইন্সটল করেন, তখন সেটি আপনার ফোনের কন্টাক্ট, গ্যালারি, বা মাইক্রোফোনের অনুমতি চায়। অপ্রয়োজনীয় অনুমতি দেওয়া মানে একজন অপরিচিত ব্যক্তিকে আপনার বাড়ির চাবি দিয়ে দেওয়া। অনেক অ্যাপ এই তথ্যের অপব্যবহার করে।

করণীয়: অ্যাপ ইন্সটলের সময় শুধুমাত্র যৌক্তিক অনুমতিগুলোই প্রদান করুন। ফোনের সেটিংসে গিয়ে পুরনো অ্যাপগুলোর অনুমতি পর্যালোচনা করুন।

পাবলিক ওয়াই-ফাই: বিনামূল্যের ফাঁদ

রেস্টুরেন্ট বা শপিং মলের ফ্রি ওয়াই-ফাই ব্যবহার করা একটি জনাকীর্ণ কক্ষে দাঁড়িয়ে ব্যক্তিগত কথা বলার মতো। একই নেটওয়ার্কে থাকা অন্য কেউ সহজেই আপনার ব্রাউজিং ডেটা বা পাসওয়ার্ড দেখে ফেলতে পারে। এই নেটওয়ার্কগুলো সাধারণত সুরক্ষিত থাকে না।

করণীয়: পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার করে কখনোই আর্থিক লেনদেন বা সংবেদনশীল তথ্য আদান-প্রদান করবেন না। প্রয়োজনে VPN ব্যবহার করুন।

অধ্যায় ৪: সাইবার আক্রমণের শিকার হলে আপনার জরুরি করণীয়

ক্ষতি সীমাবদ্ধ করুন

অবিলম্বে ব্যাংক বা MFS প্রোভাইডারের হেল্পলাইনে যোগাযোগ করে অ্যাকাউন্ট বা কার্ডের লেনদেন সাময়িকভাবে স্থগিত করুন।

অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত করুন

আক্রান্ত অ্যাকাউন্টের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল অ্যাকাউন্টের (বিশেষত ইমেইল) পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন।

প্রমাণ সংরক্ষণ করুন

অপরাধীর ফোন নম্বর, মেসেজ, এবং লেনদেনের বিবরণসহ সকল ডিজিটাল প্রমাণের স্ক্রিনশট সংগ্রহ করুন।

আইনি সহায়তা নিন

সংরক্ষিত প্রমাণসহ নিকটস্থ থানায় জিডি করুন অথবা নিচে উল্লেখিত সরকারি পোর্টালে অভিযোগ দায়ের করুন।

আপনিই আপনার সুরক্ষার প্রথম প্রাচীর

সচেতনতা এবং জ্ঞানই সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে আপনার সবচেয়ে বড় অস্ত্র। নীরব না থেকে অভিযোগ করুন এবং একটি নিরাপদ ডিজিটাল সমাজ গঠনে সহায়তা করুন।